চলচ্চিত্রের আবির্ভাব
চলচ্চিত্র সাধারণভাবে চারুশিল্পেরই পর্যায়ভুক্ত। একশো বছরের এই শিল্পমাধ্যম যা আমরা উপভোগ করি সেটা ফ্রান্সের লুমিয়ের ভাই দের ১৮৯৫ সালে ‘সিনেমাটোগ্রাফ’ আবিষ্কারের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবীতে।
স্থির চিত্রকে সচল করে তোলার প্রচেষ্টাই চলচ্চিত্র আবির্ভাবের বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের প্রথম ধাপ বলা যায়। সামগ্রিক ভাবে বলা যায় পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রের ইতিহাস আদতে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিবর্তনের ইতিহাসকেই একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোন থেকে দেখাতে থাকে।
সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিবর্তন এই চলচ্চিত্র শিল্পকে প্রথম থেকেই প্রভাবিত করেছে। পৃথিবীর সর্ব কনিষ্ঠ অথচ শক্তিশালী এই শিল্প মাধ্যমটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে নিজেদের মধ্যে কারিগরি অবস্থার প্রতিফলন ঘটিয়ে তার ইতিহাসের গতিপথ তৈরী করেছে। পরিণত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ উৎপাদন শিল্পে।
ছায়াকে ছবি করে প্রতিষ্ঠা করার কথা যখন মানুষের চিন্তার জগতে প্রথম উঁকি দিতে শুরু করলো, সেই সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত এই অভাবনীয় উত্তরনের পিছনে রয়েছে বহুমানুষের নিরলস কর্ম প্রচেষ্টা। নানান ঘাত প্রতিঘাত ও নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্র আজ পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত। কিভাবে শুরু হয়েছিল সিনেমার এই যাত্রা? কোন ভাবনা থেকে এর উদ্ভাবন?
কিভাবে শুরু হয়েছিল সিনেমার এই যাত্রা? কোন ভাবনা থেকে এর উদ্ভাবন?
আমাদের দৃষ্টির স্থায়িত্ব কতটা?
চোখের সামনে একটি বৈদ্যুতিক পাখাকে ঘুরতে সকলেই দেখে থাকে। যখন একটি পাখা তার পূর্ণ শক্তিতে দ্রুত ঘুরতে থাকে তখন পাখার পাত গুলোকে স্বতন্ত্র ভাবে চিহ্নিত করা যায় না স্বাভাবিকভাবেই। অথচ পাখা চালানোর পরে শুরু কয়েক মুহূর্ত ওই ঘূর্ণায়মান পাখার পাত গুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে দেখা যাচ্ছিল। ক্রমে এই পার্থক্য করা আর সম্ভব হয় না। তার অর্থ একটি বিশেষ গতি লাভের পর মানুষের চোখ তাকে আর স্বতন্ত্র করতে পারে না। এই ইন্দ্রিয়গত দুর্বলতাকে ‘দৃষ্টির স্থায়িত্ব’ বা ‘পারসিস্টেন্স অফ ভিশন’ বলে। রামধনুর সাত রঙ যদি আলাদা করে একটা গোল চাকতির ওপর এঁকে তারপর চাকতিটিকে যদি পূর্ণগতিতে ঘুরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে সাতটা রঙ মিশে সাদা হয়ে গেছে। এরও ব্যাখ্যা দিতে পারে ওই ‘দৃষ্টির স্থায়িত্ব’।
কোন ছবি দেখার পর মুহূর্তে ওই ছবিটার রেশ আমাদের মস্তিষ্কে খুবই সামান্য , এই ১/১২ সেকেন্ড সময় জুড়ে থাকে। ফলে এর চেয়ে কম সময়ে যদি একটি ছবি সরিয়ে ঠিক একই যায়গায় আর একটা ছবিকে এনে বসানো যায়, মস্তিষ্ক তখন প্রথম ছবিটার ওপর দ্বিতীয় ছবিিটাকে আরোপ করে। এই জন্য রামধনুর সাত টা রঙ চাকতির ওপর থাকলেও, ঘুরন্ত অবস্থায় আমাদের মস্তিষ্কে সেগুলোর সংমিশ্রণ ঘটে। এবং আমাদের মনে হয় একটা সাদা চাকতি ঘুরছে।
Persistence Of Vision
পার্সিস্টেন্স অফ ভিশন - একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
কিন্তু স্থির চিত্রকে গতিশীল কিভাবে করা যায় এই নিয়ে শুরু হয় গবেষণা-পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কোন গতিশীল বস্তুর একের পর এক ছবি তোলা হল। অবশ্য তা র্যানডম বা উপর্যপুরি নয়, একটা ছবি তোলার পর ১/১২ সেকেন্ড বা তার চেয়েও কম সময়ে তুলতে হলো পরের ছবি গুলো। ভাবনা এই রকম ছিলো যে এরপর ওই স্থির চিত্রগুলো একই রকম দ্রুতিতেই যদি পর পর দেখানো হয় ‘ দৃষ্টির স্থায়িত্ব’ তখন আর ওই চিত্ররাশির স্থির চরিত্র রক্ষা করবে না। একটা গতি সম্পন্ন বস্তবতা লাভ করবে। টের পাওয়া যাবে যে আমাদের ঠকিয়ে স্থির চিত্র চলমান হয়ে উঠেছে। আর এই স্থির আলোকচিত্রকে চলমান করে তোলার সুবাদেই চলচ্চিত্রের আবির্ভাব।
তবে আলোক চিত্রের জন্মের বহু আগেই, সেই ১৬৮০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ ‘দৃষ্টির স্থায়িত্ব’ নিয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন বিজ্ঞানি নিউটন। অবশ্য এই বিষয়ে প্রথম গবেষণা পত্র রচনার কৃতিত্ব ইংলন্ডের পিটার মার্ল রজেটের। ১৮২৪ সালের ২৪শে ডিসেম্বর লন্ডনের ‘রয়েল সোসাইটি’র সভাগৃহে রজেট পেশ করেন ‘ The persistence of vision with regard to the moving object’ – চলমান বস্তুর সাপেক্ষে দৃষ্টির স্থায়িত্ব বিশ্লেষণ। এই সভাগৃহে উপস্থিত স্যার জন হার্শেল এবং মাইকেল ফ্যারাডে সহ আরো অনেক বিজ্ঞানীদের এই বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ অনুপ্রাণিত করে। বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জোসেফ আঁতোয়া প্লেটো ও ভিয়েনার সাইমন রিটার ভন স্টাফার প্রায় একই সময়ে দৃষ্টির স্থায়িত্বকে কাজে লাগিয়ে কিছু খেলনা তৈরী করেন। তারপর ১৮৩৩ নাগাদ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘Zeotrope’ বা ‘Wheel of life’ নামক খেলনাটি। একটা ছিদ্র যুক্ত ঘুরন্ত চোঙার ভিতর দিয়ে তাকালে ঘড়া, পাখি, মানুষের স্থির চিত্রকে চলমান হয়ে উঠতে দেখা যেত।
স্থির ছবিকে সচল করার চেষ্টা
জিওট্রোপ – কেমন ছিলো একটি অ্যানিমেশন ফিল্ম

সিনেমা পূর্ববর্তী এই ধরনের খেলনার মধ্যে সব চেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল ১৮৭৯ সালে প্যারিসের এমিল রেনো-র তৈরী প্র্যাক্সিনোস্কোপ। এই যন্ত্রকে আরো উন্নত করে পরবর্তীতে তিনি পর্দায় চলমান ছবির প্রক্ষেপন করেছিলেন।
ফটোগ্রাফি এবং ‘Zeotrope’ এর প্রথম সফল সম্মিলন রেনোর পর্দায় চলমান ছবি প্রক্ষেপনের আগেই ঘটিয়ে ফেলেছেন ফিলাডেলফিয়ার কোলম্যান স্যান্ডার্স। তিনি ছিলেন পেশায় একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ১৮৬১ সালে ‘কিনেমাটোস্কোপ’ নামক এক যন্ত্রের পেটেন্ট কিনে নেন তিনি।
অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে গতির বিভিন্ন দশার স্থির চিত্র গ্রহন করে তারপর তার গতি সঞ্চারিত করে দেখালেন এই যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। এই পদ্ধতি গ্রহন করে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলেন আর এক ইঞ্জিনিয়ার ‘হেনরি রেনো হেল’। তিনি ‘Zeotrope’ থেকে পর্দায় চলমান ছবি প্রক্ষেপনের ব্যবস্থা করলেন। ১৮৭০ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি তার এই ‘Phasmatrope’ প্রদর্শিত হলো ফিলাডেলফিয়ার ‘অ্যাকাডেমিক অফ মিউজিক’-এ। ১৬০০ দর্শক সেদিন উপস্থিত ছিলেন সেই প্রদর্শনীতে। একটি চাকার অপর তিনি পর পর স্থাপন করলেন স্বচ্ছ্ব কাচের পাতে গৃহিত ফটোগ্রাফ মালা (glass plate transperency)। এই চাকতিটিকে ঘোরানোর জন্য তিনি যে যন্ত্রকৌশল ব্যবহার করেছিলেন তার নাম র্যাচেল অ্যান্ড পল।
হাতে আঁকা ছবির জায়গায় ফটোগ্রাফ, পর্দার ওপর ছবি প্রক্ষেপনের উপযোগী আলোর ব্যবস্থা ও কাচের পাতে তোলা ফটোগ্রাফের জায়গায় সেলুলয়েডের প্রবর্তন – এই তিনটি উদ্ভাবনের বা বিবর্তনের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য চলচ্চিত্রের অবির্ভাব।
ফটোগ্রাফ উদ্ভাবনের ইতিহাসে যেমন কোন একক ব্যাক্তি এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব দাবী করতে পারেন না তেমনি চলচ্চিত্র উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। ১৮৩৯ থেকে ব্যবহারিক ভাবে ফটোগ্রাফির প্রচলন। এই বছরেই ফ্রান্সের দাগারে ও ইংলন্ডের ট্যালবট দুটি ভিন্ন পদ্ধতিতে আলোকচিত্র গ্রহনের নিদর্শন সহ ব্যাখ্যা পেশ করেন। দাগারে উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি জনপ্রিয়তা হারাবার পর থেকে ১৮৮৯ সাল অবদি শুধু কাচের পাতকেই ব্যবহার করা হত নেগেটিভ বা ফিল্ম হিসেবে। সেলুলয়েডে এই বছর প্রথম ‘রোল ফিল্ম’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ফিল্মকে গুটিয়ে রাখার সুযোগ এই এলো প্রথম।
পর্দায় প্রথম ছবি প্রক্ষেপ করার উপযোগী যন্ত্রের বর্ণনা নিয়ে প্রথম কথা বলেন ‘ অ্যাথানাসিয়াস কিরশার’ নামে এক জেসুইট ১৮৪৬ সালে। পরবর্তীতে কাচের ওপর হাতে আঁকা ছবি এবং তার পর গ্লাস প্লেট ফটোগ্রাফ প্রক্ষেপের এই যন্ত্রটি ‘ম্যাজিক লন্ঠন’ নামে খ্যাত হয়। অবশ্য ম্যাজিক লন্ঠনের ছবিকে উদ্ভাসিত করার জন্য স্বতন্ত্রভাবে কোন আলোক ব্যবস্থা তখনো প্রবর্তিত হয়নি। প্রথমত এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আলোক ব্যবস্থা এবং দ্বিতীয়ত রঙ্গালয়ের অগ্নিকান্ড রোধ করার জন্য গ্যাসের আলোর বিকল্প সন্ধান – এই দুই তাগিদ থেকেই লাইম লাইট এবং কার্বন আর্ক ল্যাম্পের জন্ম।
বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন যাঁকে বিজ্ঞানের ইতিহাসে ‘উদ্ভাবনের জনক’ বলা হয়, তিনি ধারাবাহিক ভাবেই এই চলচ্চিত্র সংক্রান্ত খবরাখবরে অবহিত ছিলেন প্রথম থেকেই। ১৮৮৮ সাল নাগাদ তিনি চলচ্চিত্র গ্রহনের ও প্রদর্শনের একটি ব্যবহার যোগ্য পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য সচেষ্ট হলেন। ১৮৯৩ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম সাধারন মানুষ এডিসনের আবিষ্কার কিনেটোস্কোপে চলচ্চিত্র দেখলেন। এডিসনের কিনেটোস্কোপের জন্য ইস্টম্যান তৈরী করে দিল দুই ধারে পারফোরেটেড সেলুলয়েড ফিল্ম, যাতে একটা দাঁত ওয়ালা চাকা ঘুরিয়ে ফিল্মটাকে একটা নির্দিষ্ট গতিতে ক্রমান্বয়ে একপাশ থেকে অন্য পাশে টেনে আনা যায়। সেই সময় পঞ্চাশ ফিট দৈর্ঘের ফিল্ম রোল তৈরী হতো। এডিসন প্রথমে ৪৮ ফ্রেম প্রতি সেকেন্ডে ছবি দেখাতেন। পরে তার গতি কমিয়ে সেকেন্ডে ১৬ ফ্রেম করেন। চলচ্চিত্রের নির্বাক পর্বে ওই ১৬ ফ্রেম প্রতি সেকেন্ডই ছিল বাঁধা রেওয়াজ।
রূপালী পর্দায় সিনেমা
The Kinetoscope
Edison Kinetoscope Films 1894-1896
এডিসন সবই করলেন কিন্তু পর্দায় প্রক্ষেপ করার ব্যবস্থার দিকে নজর দিলেন না। এডিসনের কিনেটোস্কোপ যন্ত্রের মধ্যে চোখ গুঁজে চলচ্চিত্র দেখতেন দর্শক। অথচ ম্যাজিক লন্ঠনের সাহায্যে উনিশ শতকের মধ্য ভাগ থেকে ফটোগ্রাফ প্রক্ষেপের ব্যবস্থাটি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল। লুমিয়ের ব্রাদার – অগস্ট ও লুই লুমিয়ের মায়াব্রিজ ইস্টম্যান ও এডিসনের কিনেটোস্কোপের সার নিষ্কাষন করে যোগ করলেন ম্যাজিক লন্ঠনের মাত্রাটা। তৈরী হলো পর্দায় চলমান ছবি দেখিয়ে একই সঙ্গে বহু মানুষকে তৃপ্ত করার ব্যবস্থা। যদিও এডিসনের সমকালে ১৮৮৮ সাল নাগাদ এমিল রেনো নামে আর এক বিজ্ঞানী চলমান চিত্র প্রদর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি তৈরী করে ফেললেন ‘প্র্যাক্সিনোস্কোপ’। এডিসনের কিনেটোস্কোপ আর রেনোর প্র্যাক্সিনোস্কোপ প্রায় একই সময়ে প্রথম সাধারন দর্শকদের মুগ্ধ করে। এই দুটো যন্ত্রই একটি করে অক্ষমতার জন্যই সিনেমা ব্যবস্থার আদি রূপ হিসেবে স্বীকৃতি পেল না। এডিসনের কিনেটোস্কোপ ফটোগ্রাফ নির্ভর কিন্তু প্রক্ষেপের কোন ব্যবস্থা ছিলনা, আর রেনো’র প্র্যাক্সিনোস্কোপ-এ প্রক্ষেপনের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে হাতে আঁকা ছবি থেকে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতো। এদিক থেকে বিচার করলে চলচ্চিত্রে ল্যুমিয়ের নির্ভর সাফল্যের তিন বছর আগেই রেনোর সৌজন্যে অ্যানিমেশনের জন্ম হয়ে গেছে অজান্তেই। ১৮৯২ সালে প্যারিসে প্রথম টিকিট কেটে দর্শকরা রেনোর প্র্যাক্সিনোস্কোপ দেখেন।
The Projection Praxinoscope
সেই সময় রচেষ্টারের ইস্টম্যানের ফটোগ্রাফিক কারখানা বাদ দিলে ফটোগ্রাফিক সরঞ্জাম উৎপাদনে ফ্রান্সে লুমিয়ের’রা ছিল অদ্বিতীয়। ১৮৯৫ সালের মার্চ মাসে ফরাসী শিল্পোদ্যোগের উন্নতির জন্য একটা সভা বসে প্যারিসে। সেখানে লুমিয়ের একটা স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি দেখিয়ে তাঁদের উদ্ভাবনের কথা ঘোষনা করেন। পরে আরো কয়েকটি রুদ্ধদ্বার সভায় সিনেমা প্রদর্শনের পর সর্বজন সমক্ষে সিনেমা প্রদর্শনের কথা চিন্তা করেন তাঁরা। তার আগে কিছু অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। ইতিমধ্যেই কিছু সিনেমাটোগ্রাফ যন্ত্র নির্মান করে রেখে দিয়েছিলেন তাঁরা ভবিষ্যতের জন্য। দূরদৃষ্টির পরিচয়ে দিয়েছিলেন। দ্রুত নির্মান করে ফেললেন কিছু অতি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। এরপর ১৮৯৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর প্যারিসের বুলেভার্ড দ্য কাপুসিনস-এর গ্র্যান্ড কাফেতে সিনেমাটগ্রাফের উদ্বোধনী প্রদর্শন হলো জন সমক্ষে। ১২০ জন দর্শক হতবিহ্বল হয়ে পর্দায় দেখলো চলমান জীবন্ত জগৎ। এরপর খুব কম সময়ের মধ্যেই সারা পৃথিবীর মানুষ চলচ্চিত্রের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা লাভ করে ফেললো।
১৮৯৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর প্যারিসের বুলেভার্ড দ্য কাপুসিনস-এর গ্র্যান্ড কাফেতে সিনেমাটগ্রাফের উদ্বোধনী প্রদর্শন হলো জন সমক্ষে। ১২০ জন দর্শক হতবিহ্বল হয়ে পর্দায় দেখলো চলমান জীবন্ত জগৎ।
Lumiere Cinematograph
First Films Screenings in History
১৮৯৬ সালের ৭ই জুলাই তৎকালীন ভারতে বোম্বের ওয়াটসন হোটেলে লুমিয়েরদের সিনেমাটোগ্রাফ প্রথম প্রদর্শিত হয়।
চলচ্চিত্র আবির্ভাবের প্রথম পর্বের এখানেই সমাপ্তি। তবে শেষ করার আগে একটা কথা বলতেই হবে এডিসন যেমন ফনোগ্রাফের সঙ্গে কিনেটোস্কোপকে জড়িয়ে নিয়ে অগ্রসর হতে চেয়েছিলেন তেমনই বিদ্যুৎ বিশারদ হিসেবে তাঁর সিনে ক্যামেরাটিকে তিনি বৈদ্যুতিন মটর দিয়ে চালানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। হাতে ঘোরানো ক্যামেরার চেয়ে ব্যবস্থাটা একদিক থেকে নিশ্চয়ই অধিক বিজ্ঞান সম্মত। কিন্তু বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করতে গিয়ে ওই সিনে ক্যামেরাটি একটি দৈত্যাকার যন্ত্রের চেহারা নিয়েছিল। অন্য দিকে লুমিয়ের ব্রাদার মাত্র পাঁচ কেজি ওজনের সিনেমাটোগ্রাফ যন্ত্র সুটকেসে ভরে নিলেন। এই যন্ত্রটার এক সঙ্গে তিনটে বৈশিষ্ট ছিল। এই সিনেমাটোগ্রাফ যন্ত্রটা একাধারে ক্যামেরা, প্রিন্টার এবং প্রক্ষেপনের কাজে ব্যবহৃত হতো। ফলে লুমিয়রদের একজন বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত প্রদর্শক পৃথিবীর যেকোন জায়গায় পৌঁছে শুধু যে চলচ্চিত্র দেখাতেন তাই-ই নয়, চলচ্চিত্র তুলতেন এবং সেটাকে পরিস্ফুটন করে অল্প সময়ের মধ্যে প্রদর্শনও করতেন।
(ক্রমশঃ…)
অসাধারন তথ্য পেলাম, খুব ভালো লাগলো স্যার।
বিশদ বিবরণ অসাধারণ। অনেক নতুন কিছু জানলাম।