এ পত্রিকা নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব, অনবদ্য। এর আগে এমন কোনো পত্রিকা, বিশেষত বাংলায়, দেখা গেছে বলে মনে হয় না। যদিও ব্যক্তিগত ভাবে এর আগে সেভাবে কোনো ফটোগ্রাফি পত্রিকার সম্মুখীন আমি হইনি, তার কারণও আছে বটে। শুধু দেখা বা শেখা নয়, আমার ধারণা, আমি আরো কিছু খুঁজে বেড়াই। যে খুঁজে বেড়ানো থেকে সিনেমা দেখি কিন্তু অগাধ সিনেমা দেখিনি, বই পড়ি কিন্তু অগাধ বই পড়িনি। সেই খুঁজে বেড়ানো’টা হয়তো নিজেকেই খোঁজা, নিজের ইচ্ছেটাকে, নিজের স্বপ্নটাকে, প্রানটাকে, মনটাকে, ভাব-ভালোবাসা-অনুভূতিটাকে, অন্তত নিজের বলতে চাওয়ার মতো করে বলা শব্দটাকে-ভাষাটাকে খুঁজে বেড়ানো। যে কারণে অনেক বইই পড়তে শুরু করলেই কোনো এক দেবতার অভিশাপে সে বই আর পড়া হয় না। অথচ ‘মৈত্রেয় জাতক’ বারবার পড়ি, ‘কোথায় পাবো তারে’ বারবারই উল্টে পাল্টে খুঁজে বেড়াই অথবা ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’ চলে যাই বারবার। 2.8 আমায় টেনে আনে। এই ‘প্রথম সংখ্যা’টি প্রকাশিত হওয়ার পর একবার চোখের দেখা দেখেছি, আর এখনো পর্যন্ত দুবার পুঙ্খানুপুঙ্খ পড়েছি, দেখেছি।
প্রি-প্রসেসিং বিষয়টা ছবি তোলার সময় বরাবরই করি, পোস্ট-প্রসেসিং’এর থেকে বেশি করি। এবং তা করতে গিয়ে বেশ কিছু ফটোগ্রাফার সহ সাধারণ চোখের বাঁকা চাহুনি ছাড়া কিছু পাই নি। এই প্রথম আমার প্রি-প্রসেসিং স্বীকৃত হল। আবারও আমি জোর গলায় বলে উঠবো যতই দামী বা ভালো ক্যামেরা হোক না কেন, পোস্ট-প্রসেসিং এর থেকে প্রি-প্রসেসিং বেশি জরুরি। এ অধিকার আর ক্ষমতা আমায় জুগিয়েছে 2.8।
2.8 এর বক্তব্য এবং বক্তব্যের ধরণ অত্যন্ত সহজ সরল এবং সর্বোপরি প্রাণোজ্জ্বল। এর ছবি দেখানোর ধরণ আলাদা, এখানে ‘দ্যাখো আর যাও’ নয়, এখানে ‘দাঁড়ায়, দ্যাখো, বোঝো, আত্মস্থ করো, ফিরে এসো’ হয় এবং এই session’টা 2.8 নিজেই করে থাকে। এর শেখানোয় academic খটমট নেই। গল্পে গল্পে মনের সাথে মন মিলতে মিলতে, ভাবের সাথে ভাব মিলতে মিলতে কখন যে শেখা হয়ে যাবে, আপনি ধরতে পারবেন না। হ্যাঁ, তার আগে অবশ্য নিজের মন’টাকে, ভাব’টাকে প্রস্তুত রাখতে হবে, এটুকু কাজ তো দর্শক বা পাঠক বা ফটোগ্রাফার’কে নিজেকেই করতে হবে।
‘পাঠক কলম’ নিঃসন্দেহে পাঠকদের উৎসাহ দেবে।
আরো অনেক কথা (ভাব) থাকে বলার তবে হাঁড়ির সব bubble কি আর সরা সরিয়ে বাইরে বেরোতে পারে। এই রিভিউ কারো কারো অত্যুক্তি মনে হতে পারে তবে মিথ্যা বলে পৃথিবীতে কিছু হয় কি।
পত্রিকার পাতাগুলি বড্ড বেশি সেনসিটিভ, (android) পাতাগুলিতে কোনো রকম টাচ পড়লেই পাতা উল্টে যাচ্ছে। জানিনা সমস্যাটা আমার একার কিনা। এ বিষয়ে একটু খেয়াল দিলে ভালো হয়। মানে ধরুন আপনি brightness control বা screen light বজায় রাখতে screen’এ টাচ করলেন, তো screen ‘এর যেদিকে টাচ করলেন সেদিকে পাতা উল্টে গেল। একটু কসরত করতে দিলে বোধ হয় ভালো হয়, যেমন ধরুন – যে পাতাটা উল্টানো প্রয়োজন সেটিকে টাচ করে প্রয়োজনীয় দিকে ঘষা দিলে তবেই পাতা উল্টাতে পারবেন।
পুনশ্চঃ আমি ফটোগ্রাফিতে উপার্জন করি বিয়েবাড়ির assignment করে, আর আজও পর্যন্ত একবারও বলি নি, ‘দাদা মালাটা আরেকবার পরাবেন, দিদি একটু দাদার দিকে তাকিয়ে থাকুন, দাদা সিঁদুরটা আরেকবার পরান, দিদি একটু দাদার কোলে উঠে বসুন ইত্যাদি’। বরং আমি মনে করি একজন ফটোগ্রাফারের কাছে খুব কঠিন চ্যালেঞ্জ বিয়ে বাড়ি জাতীয় কাজ করা, কারণ ওখানে light-camera-action থাকে না আবার client’এর কাছ থেকে নিজের পাওনাটাও আদায় করার থাকে। একবার উপরিউক্ত বিষয় নিয়ে এক wedding photographer’কে উত্তম মধ্যম ধোলাই দিয়েছিলাম এক social media’তে অবশ্য নামোল্লেখ না করে। আর এই পুরো বিষয়টাতে আমাকে স্বস্তি দিল সাহস দিল শক্তি দিল 2.8। আমি কৃতজ্ঞ 2.8’এর কাছে।